পীরগঞ্জ,রংপুর, প্রতিনিধিঃ রংপুরের পীরগঞ্জের সেই দুর্নীতিবাজ সাব-রেজিষ্ট্রার শামসুজ্জামান সর্দারকে অবশেষে কক্সবাজার জেলায় শাস্তিমুলক বদলি করা হয়েছে। নানা সেচ্ছাতারিতা, অনিয়ম, দুর্নিতী ও বিপুল অবৈধ সম্পদ আহরনের কারনে জেলা দুর্নিতী দমন কার্যালয়ের অধিনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে।
প্রকাশ, সাব রেজিষ্টার শামসুজ্জামান সর্দার দলিল সম্পাদনে অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নিতী করে আসছিল। মৃত ব্যক্তির দলিল সম্পাদন, ভূয়া দাখিলা-খাজনা রশিদে দলিল সম্পাদন, দলিল প্রতি ১৩’শ টাকা বাধ্যতামূলক ঘুষ গ্রহণ, শ্রেণী পরিবর্তন করে সরকারের প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি, নকল নাবিশে ২’শ ৪০ টাকার স্থলে ৫’শ টাকা গ্রহণ, এক দলিলে একাধিক মৌজায় অতিরিক্ত ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ, বন্টননামা/অছিয়তনামা/পাওয়ার অব অ্যাটনী দলিলে জমির কম বেশির উপর সরকারী ফি স্ট্যাম্প ব্যতিরেকে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ, অফিস ত্যাগের পরে পিয়নের মাধ্যমে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ টি দলিলে ৫ থেকে ২০ হাজার ঘুষ গ্রহণ,জমি বিক্রেতাকে মারধর করারও অভিযোগ রয়েছে। ইহা ছাড়াও আমোদপুর মৌজায় দলা ৪৮৬৫ টাকা, ডাঙ্গা ৪৪৮১ টাকা, ভিটা ২৯০০ টাকা এবং জাহাঙ্গীরাবাদ মৌজায় দলা ৮৩৪৬ টাকা ডাঙ্গা ১১৩৮৮ টাকা ভিটা ৩০৩৫ টাকা সরকারী নির্দ্ধারিত মূল্য ধার্য্য থাকলেও, জমি গ্রহিতা ইদ্রিস আলী ,দলিল লেখক, ও সাব-রেজিষ্টার যোগ সাজস করে জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে মূল্য কমে ১১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকায় জমি রেজিষ্ট্রি সম্পাদন করে। এতে ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয় । এই দলিল সম্পাদনে সাব-রেজিষ্টার ঘুষ গ্রহণ করে ৫০ হাজার টাকা। এ ভাবে তিনি পীরগঞ্জ সাব-রেজিষ্টি অফিস থেকে প্রতিদিন ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা বাড়তি আয় করে থাকেন বলে জানান, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অফিস স্ট্যাপ। অপরদিকে এসমস্ত দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ৩জন নকল নবীস ও ৩জন দলিল লেখককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সাব-রেজিষ্টার শামসুজ্জামান সর্দার। এসকল বিষয়ে স¤প্রতি দলিল লেখক ও নকল নবীসের একাংশ সাব-রেজিষ্টারে সেচ্ছাতারিতা, অনিয়ম ও দুর্নিতির বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা রেজিষ্টার, জেলা প্রশাসক, জেলা রেজিষ্টার, দুর্নীতি দসন কমিশন সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিস্তু দুঃখের বিষয় বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগেও কোন কাজ হয়য়নি বলে জানান, দলিল লেখক শামিম মিয়া, আনিছুর রহমান, ইয়াকুব আলী ও নকল নবীস ছফুরা বেগম সহ অনেকে। উলিখিত বিষয়ে স্থানিয় বিভিন্ন দৈনিকে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান মুলক বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নিতীর সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় দুর্নিতী দমন কমিসনসহ সংস্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। দুর্নিতী দমন কমিসন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্তে এর সত্যতা পাওয়ায় এবং অবৈধ সম্পদ আহরনের অভিযোগে গত ১০ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করে। অপরদিকে সংস্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষও তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রমান পাওয়ায় দুর্নিতীবাজ সাব-রেজিষ্ট্রার শামসুজ্জামান সর্দারকে, গত ২৯ ডিসেম্বর শাস্তিমুলক কক্সবাজার জেলায় বদলি করা করেছে। এদিকে গত ৬ জানুয়ারী বিকেল ৪টায় দুজন নতুন সাব-রেজিষ্ট্রার মিজানুর রহমান ও খায়রুজ্জামান সরকার যোগদান করেছে। মিজানুর রহমান বুধ ও বৃহস্পতি এবং খায়রুজ্জামান সরকার রবি ও সমবার অপিস করবেন। অভিযুক্ত সাব-রেজিষ্ট্রার শামসুজ্জামান সর্দারের বিরুদ্ধে সংস্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেও বহিস্কৃত দলিল লেখক ও নকল নবীসদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে দাবী ভুক্তভোগীদের। ১জন নকল নবীস ও ১জন দলিল লেখকের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার হলেও বাকী ৪জনের প্রত্যাহার করা হয়নি। অথচ এ ৪জন প্রতিবাদী দলিল লেখক ও নকল নবীসদের কারনে উক্ত দুর্নীতিবাজ সাব-রেজিষ্ট্রারের সকল অপকর্ম ধরাপড়ে। সচেতন মহল অন্যায় ভাবে বহিস্কারকৃত দলিল লেখক ও নকল নবীসদের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন । এ ব্যাপারে জেলা রেজিষ্টার আইয়ুব আলী মন্ডলের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, অমি গত ৫জানুয়ারী তারিখে যেগদান করেছিমাত্র। বিষয়টি আমার আগের জেলা রেজিষ্টার মনিন্দ্র নাথ বর্মনের। তবে যদি সত্যি তাদের বিরুদ্ধে অন্যায় হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই সঠিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।